পশ্চিমবঙ্গের লক্ষ লক্ষ সরকারি কর্মী এবং পেনশনভোগীদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান কি অবশেষে ঘটতে চলেছে? মহার্ঘ ভাতা বা ডিএ (DA) মামলা নিয়ে রাজ্য সরকারি কর্মীদের মধ্যে যে উত্তেজনা এবং আশা কাজ করছে, তার ভাগ্য নির্ধারণের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন হতে পারে আগামী ৪ঠা আগস্ট। সুপ্রিম কোর্টে এই বহুচর্চিত মামলার শুনানি হওয়ার একটি ক্ষীণ সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যা নিয়ে আশায় বুক বাঁধছেন সকলে। যদিও মূল তালিকায় মামলার নাম নেই, তবুও একটি বিশেষ উপায়ে সেদিন শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা এখনো বেঁচে রয়েছে।
এই মামলাটি শুধুমাত্র কর্মীদের আর্থিক অধিকারের লড়াই নয়, এটি এখন তাঁদের আত্মসম্মানের লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ায় এই আইনি জটিলতা আরও বেড়েছে। এখন সকলের চোখ দেশের সর্বোচ্চ আদালতের দিকে।
মূল বিষয়গুলির রূপরেখা (Outline of Main Points):
- সম্ভাব্য শুনানির তারিখ: ৪ঠা আগস্ট, ২০২৩ ডিএ মামলার শুনানি হওয়ার একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
- কজলিস্টের বর্তমান অবস্থা: সুপ্রিম কোর্টের প্রকাশিত মূল তালিকায় (Cause List) ডিএ মামলার নাম নেই।
- আশার আলো: মূল তালিকায় নাম না থাকলেও, সাপ্লিমেন্টারি লিস্টের (Supplementary List) মাধ্যমে মামলাটি শুনানির জন্য ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে।
- মামলার প্রেক্ষাপট: কলকাতা হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী, ডিএ কর্মীদের অধিকার। রাজ্য সরকার এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে।
- কর্মীদের প্রত্যাশা: কেন্দ্রীয় হারে বকেয়া ডিএ পাওয়ার দাবিতে লক্ষ লক্ষ কর্মী এবং পেনশনভোগী তাকিয়ে রয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের রায়ের দিকে।
সম্পূর্ণ নিবন্ধ (Full Article):
৪ঠা আগস্টের দিকে তাকিয়ে রাজ্য:
পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা (DA) একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারের হারে ডিএ পাওয়ার জন্য আন্দোলন ও আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। এই লড়াইয়ের জল গড়িয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত, অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। সম্প্রতি, ৪ঠা আগস্ট তারিখে এই মামলার শুনানি হতে পারে বলে একটি খবর ছড়িয়ে পড়েছে, যা কর্মীদের মনে নতুন করে আশার সঞ্চার করেছে।
কিন্তু আসল বিষয়টি কী? সুপ্রিম কোর্টের নিয়ম অনুযায়ী, শুনানির কয়েকদিন আগে একটি “কজ লিস্ট” বা মামলার তালিকা প্রকাশ করা হয়। ৪ঠা আগস্টের জন্য প্রকাশিত মূল তালিকায় পশ্চিমবঙ্গের ডিএ মামলার উল্লেখ নেই। স্বাভাবিকভাবেই এই খবরে কর্মীরা কিছুটা হতাশ হয়েছিলেন। তবে আশার আলো এখনো নিভে যায়নি। অনেক সময় মূল তালিকার পর একটি “সাপ্লিমেন্টারি লিস্ট” বা অতিরিক্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়, যেখানে জরুরি ভিত্তিতে কিছু মামলার শুনানি করা হয়। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ সহ রাজ্যের কর্মচারী সংগঠনগুলো আশাবাদী যে, এই সাপ্লিমেন্টারি লিস্টেই হয়তো ডিএ মামলাটি অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
মামলার প্রেক্ষাপট এবং আইনি লড়াই:
এই ডিএ মামলার লড়াই বহু পুরনো। রাজ্য সরকারি কর্মীরা অভিযোগ করে আসছেন যে, কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের তুলনায় তাঁরা অনেক কম হারে ডিএ পান। এই বৈষম্যের অবসান চেয়ে তাঁরা প্রথমে স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল (SAT) এবং পরে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন।
কলকাতা হাইকোর্ট একটি ঐতিহাসিক রায়ে জানায় যে, “ডিএ কর্মীদের ভিক্ষা নয়, এটা তাদের আইনি অধিকার।” আদালত রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেয় কর্মীদের বকেয়া ডিএ মিটিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু রাজ্য সরকার আর্থিক সংকটের কারণ দেখিয়ে সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে একটি বিশেষ অনুমতি SLP দায়ের করে। তারপর থেকেই মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন।
লক্ষ লক্ষ কর্মীর আশা-আকাঙ্ক্ষা:
রাজ্যের প্রায় দশ লক্ষ সরকারি কর্মী এবং পেনশনভোগী এই মামলার দিকে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে রয়েছেন। তাঁদের মতে, লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধির বাজারে ডিএ তাঁদের বেঁচে থাকার অন্যতম রসদ। কেন্দ্রীয় হারে ডিএ পেলে তাঁদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হবে। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের মতো সংগঠনগুলি लगातार কর্মীদের একত্রিত করে রেখেছে এবং আইনি লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। ৪ঠা আগস্ট যদি সত্যিই শুনানি হয় এবং কর্মীদের পক্ষে কোনো ইতিবাচক ইঙ্গিত আসে, তবে তা হবে রাজ্যের কয়েক লক্ষ পরিবারের জন্য এক বিরাট খুশির খবর।
এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। ৪ঠা আগস্টের সাপ্লিমেন্টারি লিস্টে ডিএ মামলার নাম ওঠে কিনা, আর উঠলে সর্বোচ্চ আদালত কী নির্দেশ দেয়, সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ।